আমি তখন অনেক ছোট, সেভাবে খেতেও শিখিনি। কিন্তু বাড়িতে ইলিশ আর চিংড়ি হলে একটু বেশিই যেন খুশী হতাম। ইলিশ তো হতই, কিন্তু দাদু যেদিন বাড়িতে বড়ো চিংড়ি আনতেন সেইদিন দাদুর মুখে একটা আলাদা হাসি থাকত, একটা তৃপ্তি থাকত, বিশেষ করে ভরা বর্ষায় ইলিশের ভরা মরশুমে। সেদিনই বাড়ির সবাই বুঝে যেত নির্ঘাত আগের দিন মোহনবাগান জিতেছে। তখন এত শত বুঝি না, দু-একজন খেলোয়াড়ের নাম টুকুই শুধু জানতাম দাদুর কাছে গল্প শুনে। ২০০৪-০৫ হবে তখন। আমার মধ্যে কালী-রামকৃষ্ণ প্রীতি বা মোহনবাগান প্রীতির বীজ বপন করেছিলেন আমার দাদু। দাদু বলেছিলেন, "একটু বড় হ, ৩ মন্দির একসাথে ঘুরিয়ে আনবো"।
১. বাগবাজার মায়ের বাড়ি
২. কালীঘাটের কালী বাড়ি
৩. মোহনবাগান ক্লাব।
                    দাদু আর সেকথা রাখতে পারেননি। ২০০৮ সালে মার্চে যখন তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান আমার তখন সবে ১০ বছর বয়স। এরপর ২০১২ তে টিভিতে দেখলাম "এগার" সিনেমা। তারপর থেকেই মোহনবাগানের প্রতি টান অটুট হল। 
                    ২০১৩। আমার মাধ্যমিকের বছর। মাধ্যামিক দেওয়ার পর একদিন একা একাই আমি ঘুরে আসি ওই তিন মন্দির থেকে। সেটাই প্রথম মোহনবাগান নামক মন্দিরে আমার প্রবেশ।
                    দাদুর কাছে শুনতাম গোষ্ঠ পালের কথা, বাবলু দার কথা, (পরে জানলাম উনিই সেই বিখ্যাত সুব্রত ভট্টাচার্য), শিশির ঘোষ, প্রসূন, চুনী গোস্বামী, আরও অনেক অনেক নাম। তখন মনে ছিল না। এখন মেরিনার্স এরিনার সদস্য হবার দৌলতে আবার এই সেসব নিয়ে চর্চা হয়।
                    দাদু কোনোদিন ভোলেননি ৫-০ গোলে ইষ্টবেঙ্গলের কাছে হারের যন্ত্রণা। শুধু বলতেন কেউ না কেউ একদিন না একদিন এর থেকেও বেশি গোলে ওদের ঠিক হারাবে। দাদু বলতেন, মোহনবাগান শুধু একটা ফুটবল ক্লাব না, শুধু ঘটিদের ক্লাবও না; এটা দেশের গৌরব, ঐতিহ্য, স্বাধীনতার অংশ। দাদুর কাছে ১৯১১-এর কথা কিছু শুনেছিলাম কিনা তা মনে পরে না। কিন্তু দাদুর শ্রী গুরুদেব তৎকালীন তন্ত্রসম্রাট মিহির কিরণ ভট্টাচার্যও নাকি মোহনবাগানে খেলতেন বলে শুনেছিলাম।
                    তারপর হাতে ফোন আসে, পুরানো ভিডিও দেখি YouTube-এ। মাঠে বসে খেলা আগে সেভাবে দেখিনি কোনোদিন, টিভি আর ফোনেই দেখতাম। মোহনবাগান জিতলে এখন আমিও বাড়িতে চিংড়ি আনি, আনন্দ করি। এই আবেগ, ভালোবাসা এগুলো কয়েকটা শব্দে এইভাবে সত্যিই বন্দি করা যায় না। 
                    বর্তমানে আমি মেরিনার্স এরিনার সদস্য, তাই মোহনবাগানের সাথে প্রায় অনেকটা সময় জুড়ে থাকতে পারি। তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখি, গলা ফাটাই "জয় মোহনবাগান" বলে। এটা একটা বড় প্রাপ্তি। একটা অসাধারণ তৃপ্তি। শুধু চাই, প্রতি জন্মে যেন মোহনবাগানীই হয়ে উঠতে পারি।
                    সবাই মিলে একবার জোরে বলুন "জয় মোহনবাগান"।